Saturday, February 20, 2016

রাঙা পলাশে শহীদ স্মরণ


শিমুলে পলাশে রাঙা বাংলার দিগন্ত। গাছে গাছে নবীন পাতার গুচ্ছ। প্রকৃতিতে যখন নবীনের উন্মেষের আনন্দ-উচ্ছ্বাস, তখনই এক মর্মমূল ছেঁড়া বেদনার ঘটনা ঘটেছিল এই বাংলায়। আজ থেকে ৬৪ বছর আগে। মায়ের ভাষার অধিকার রক্ষার দাবিতে শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অকুতোভয় বীর সন্তানেরা নেমে এসেছিলেন রাজপথে। বুকের তাজা রক্তে বসন্তের রাঙা ফুলের মতোই রাঙিয়ে দিয়েছিলেন ঢাকার রাজপথ। মাতৃভাষার দাবিতে আত্মদানের এক অভূতপূর্ব অধ্যায় সেদিন সংযোজিত হয়েছিল মানব ইতিহাসে। আজ রোববার সেই অনন্য স্মৃতিধন্য দিন। অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
মাতৃভাষার জন্য বাঙালির আত্মদানের এই অতুলনীয় ঘটনা স্বীকৃত হয়েছে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে। ১৯৯৯ সালে ইউনেসকো ২১ ফেব্রুয়ারিকে ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। আজ বাঙালির সঙ্গে সারা বিশ্বেই দিনটি পালিত হচ্ছে।
দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের সংখ্যালঘু পশ্চিমা শাসকেরা শুরু থকেই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিদের ওপর শাসন-শোষণের চক্রান্ত শুরু করে। তারা আঘাত হানে বাঙালির মাতৃভাষার ওপর। একতরফাভাবে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করায় পূর্ব বাংলায় গড়ে ওঠে বিপুল আন্দোলন। ১৯৪৮ থেকে ভাষা
আন্দোলন এগিয়ে যায় ধাপে ধাপে। চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয় ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় ১৪৪ ধারা ভেঙে ছাত্র-জনতা রাজপথে বিক্ষোভ মিছিলে নামলে। সেই মিছিলে গুলি করা হলে সালাম, বরকত, রফিক, সফিউর, জব্বারসহ নাম না জানা বীর সন্তানদের রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। এই ঘটনা ভাষা আন্দোলনকে আরও বেগবান করে তোলে। অবশেষে ১৯৫৬ সালে শাসকগোষ্ঠী নতিস্বীকার করে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।
আজ কৃতজ্ঞ জাতি বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে ভাষাশহীদদের। তাঁদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নিবেদন করা ফুলে ফুলে ভরে উঠবে সারা দেশের শহীদ মিনারের বেদি। প্রভাতফেরিতে সবার কণ্ঠে থাকবে সেই চিরচেনা গান ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি...।’ ঢাকায় শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর অনেকেই যাবেন আজিমপুর কবরস্থানে শহীদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করতে।
বাণী: মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেছেন। তাঁরা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাঁর বাণীতে বলেন, ‘আমরা গর্ববোধ করি এই ভেবে যে, অমর একুশের চেতনা আজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে। আমাদের শহীদ দিবস এখন বিশ্বজুড়ে স্বকীয়তা রক্ষার চেতনার উৎস। এই চেতনাকে ধারণ করে পৃথিবীর সব ভাষাভাষী মানুষের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপিত হবে, লুপ্তপ্রায় ভাষাগুলো আপন মহিমায় নিজ নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে উজ্জীবিত হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, ‘অমর একুশে আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক। বর্তমান সরকার একুশের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে ধারণ করে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, সাম্প্রদায়িকতা ও নিরক্ষরতামুক্ত আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাঁর বাণীতে বলেছেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনের এক তাৎপর্যময় দিন। ভাষাশহীদদের মহিমান্বিত আত্মত্যাগের বিনিময়েই রচিত হয়েছে আমাদের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের প্রথম সোপান।’

No comments:

Post a Comment